গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজঃ কারণ, লক্ষণ ও প্রতিকার।

 


লাম্পিস্কিন রোগ:

সাম্প্রতিক সময়ে দেশে গরুর এলএসডি আক্রান্তের হার বেড়ে গেছে।প্রাথমিক অবস্থায় বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় লক্ষ্য করা গেলেও এখন প্রায় সব জেলায় এ রোগ দেখা যায়। একটি খামারের অর্থনৈতিক অবস্থার ধ্বস নামানোর জন্য খুরা রোগের চেয়ে এলএসডি অনেক বেশি ভয়ংকর।

Lamphi Skin Diseases (LSD) একটি ভাইরাস বাহিত চর্মরোগ। আফ্রিকায় একাধিকবার মহামারী আকারে দেখা দিয়েছে এ রোগটি।

জানা যায় আফ্রিকার জাম্বিয়ায় ১৯২৯ সালে প্রথম এই রোগ সনাক্ত করা হয়, যা ১৯৪৩ থেকে ১৯৪৫ সালের মধ্যে মহাদেশের বিভিন্ন এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে। 

এবং সত্তর এবং আশির দশকের দিকে আফ্রিকার সব দেশে এই রোগ ছড়িয়ে পড়ে যাতে খামারিরা ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়। 

এলএসডি গরুর জন্য একটি ভয়ঙ্কর ভাইরাসজনিত চর্মরোগ, যা খামারের ক্ষতির কারণ।তবে এখন পর্যন্ত এর কোনো প্রতিষেধক আবিষ্কার হয়নি। মশা-মাছি বাহিত রোগটি মূলত মশার মধ্যমেই বেশি ছড়ায়। আক্রান্ত গরু সুস্থ হতে দীর্ঘদিন সময় লাগে। দিন দিন গরু-বাছুর দুর্বল হয়ে পড়ে। অনেক ক্ষেত্রে মারাও যায়।

বাংলাদেশে গরুর লাম্পি স্কিন ডিজিজ প্রথম দেখা দেয় ২০১৯ সালে চট্টগ্রামে।এ বছর আবার এ রোগটি দেশের বিভিন্ন জেলায় দেখা দিয়েছে।

রোগের কারণঃ

গবাদিপশুতে এলএসডি বা পক্স জাতীয় ভাইরাসের সংক্রমণে সাধারনত এই রোগ দেখা যায়।ভাইরাসটি Poxviridae পরিবারের অন্তর্ভুক্ত Capripox virus গণের ভাইরাস।এ ভাইরাস গরু ছাড়া মহিষেও ছড়াতে পারে।এ ভাইরাস মানুষকে আক্রমণ করে না।

রোগের সময়ঃ

মশা মাছি অধিক বংশবিস্তার করার সময় যেমন - বর্ষার শেষ, শরতের শুরু অথবা বসন্তের শুরুতে এই রোগটি ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে।

রোগ ছড়ানোর মাধ্যম:

লাম্পি স্কিন রোগে আক্রান্ত গরু হতে বিভিন্ন মাধ্যমে ভাইরাসটি অন্য গরুতে ছড়িয়ে পড়তে পারে।যেমন -

১.মশা ও মাছিকে এ ভাইরাসের প্রধান বাহক হিসেবে দায়ী করা হয়। অন্যান্য কীট-পতঙ্গের মাধ্যেমে এ রোগএক প্রাণী হতে অন্য প্রাণীতে দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে।

২.আক্রান্ত গরুর লালা গরুর খাবারের মাধ্যমে এবং খামার পরিচর্যাকারী ব্যক্তির কাপড়ের মাধ্যমে এক গরু থেকে অন্য গরুতে ছড়াতে পারে।

৩.আক্রান্ত গাভির দুধেও এ ভাইরাস বিদ্যমান। তাই আক্রান্ত গাভির দুধ খেয়ে বাছুর আক্রান্ত হতে পারে।

৪.চিকিৎসকগণ যদি এক সিরিঞ্জ ব্যবহার করে বিভিন্ন গরু-ছাগলকে টিকা দেয় বা ব্যাবহার করার মাধ্যেমে আক্রান্ত গরু থেকে সুস্থ গরুতে ছড়িয়ে পড়ে।

৫.এক স্থান হতে অন্য স্থানে পরিবহনের মাধ্যমে আক্রান্ত প্রাণী হতে রোগটি ব্যাপকভাবে ছড়াতে পারে।

৬.ভাইরাসে আক্রান্ত ষাঁড়ের সিমেন প্রজননে ব্যবহার করলেও এ রোগ ছড়িয়ে পড়ে। 

৭.আক্রান্ত প্রাণীর লালা, দুধ এর মাধ্যেমে।

লক্ষণ:

এলএসডি আক্রান্ত গরু শুরু হতে যেসব লক্ষণ প্রকাশ করে-

১.আক্রান্ত গরুর প্রাথমিক পর্যায়ে জ্বর,শরীরেব্যথা, খাবার গ্রহণে অনীহা দেখা দেয়।

৩.আক্রান্ত গরুর শরীরের বিভিন্ন জায়গায় ফোস্কা বা গোলাকার গুটি দেখা দেয়। 

৪.শরীরের নিম্নাংশে এবং পা ফুলে পানি জমা হতে দেখা যায়।

৫.মুখের ভিতরে এবং পাকস্থলীতে সৃষ্ট ক্ষতের কারনে গরুর পানি পান এবং খাবারের পরিমান কমে যায়।

৬.অনেক সময় ক্ষত স্থান হতে রক্তপাত হতে দেখা যায়।

৭.ফোস্কা বা গুটি ফেটে যায় ও ক্ষত সৃষ্টি হয়।

এ রোগে আক্রান্ত গাভী যদি সুস্থ হয়ও দুধের উৎপাদন কমে যায়।গাভী যদি গর্ভবতী হয় তা হলে গর্ভপাত হবার সম্ভবনা থাকে।এবং বন্ধ্যাত্বসহ ওজন অনেকাংশে কমে যায়,আক্রান্ত প্রাণীর চামড়ার মান খারাপ হয়ে যায়।

রোগ নিয়ন্ত্রণ:

যেহেতু এ রোগের ভ্যাকসিন সহজলভ্য নয়, তাই আগে থেকে সতর্ক থাকা এবং রোগের চিকিৎসার চেয়ে প্রতিকারের ব্যবস্থা করা।

১.আক্রান্ত প্রাণীর জন্য মশারির ব্যবস্থা করা।

২.আক্রান্ত প্রাণী দ্রুত অন্য স্থানে সরিয়ে পৃথক ভাবে চিকিৎসা ও পরিচর্যা করা।

৩.খামার ও এর আশ-পাশের পরিবেশ পরিস্কার পরিছন্ন রাখা, মশা-মাছি নিয়ন্ত্রণ করা এবং গরুর বাসস্থানের আশেপাশে স্প্রে করা।

৪। সুস্থ না হওয়া পর্যন্ত গরু বাইরে চারণ ভূমিতে না নেয়া।

৫.আক্রান্ত অঞ্চলে প্রাণী না নেওয়া।

৬.আক্রান্ত গাভীর দুধ ব্যাবহারের জন্য এক এলাকা থেকে অন্য এলাকায় না নিয়ে মাটির গর্তে ফেলে দেয়া।

৭.বাইওসিকিউরিটি মেনে চলা।

চিকিৎসাঃ

এ রোগের সুনির্দিষ্ট কোনো চিকিৎসা না থাকায় শুধু সচেতনতার মাধ্যমেই এ রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। রোগের লক্ষণ অনুযায়ী চিকিৎসা করাতে হয়। প্রাথমিকভাবে অ্যান্টিপাইরেটিক ও অ্যান্টিহিস্টামিন দিয়ে চিকিৎসা করা হয়। গুটি ফেটে গেলে বা সেকেন্ডারি ব্যাক্টেরিয়াল ইনফেকশন দমন করার জন্য সিস্টেমিক অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগ করা যেতে পারে। এ ছাড়াও ফেটে যাওয়া গুটিতে যেন মশা-মাছি বসতে না পারে, সে জন্য বাজারে বিভিন্ন দরনের ঔষধ পাওয়া যায় তা ব্যাবহার করা।লাম্পি স্কিন ডিজিজ ২১ দিন পর সাধারণত এমনিতেই সেরে যায়।লাম্পি স্কিন ডিজিজ রোগের লক্ষণ প্রকাশ পেলেই দ্রুত উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা বা অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা গ্রহন করা।

আরও পড়ুন -





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.