গরুর নিউমোনিয়া রোগের কারণ,লক্ষণ ও প্রতিকার।

 


নিউমোনিয়া:

গবাদিপশুর রোগগুলোর মধ্যে নিউমোনিয়া অন্যতম।এটি ফুসফুসের প্রদাহজনিত একটি রোগের নাম।সহজ কথায় বলা যায় ফুসফুসের প্রদাহকে নিউমোনিয়া বলে।নিউমোনিয়া শ্বাসতন্ত্রের মারাত্বক একটি রোগ।রোগটিতে বাছুর গরু বেশি আক্রান্ত হয়।নিউমোনিয়া অতিমাত্রায় বা হালকা হোক তা পশুর মৃত্যু হতে পারে।অনেক সময় ফুসফুসের প্রদাহের সাথে ব্রংকিওলসের প্রদাহ হয়ে থাকে এ জন্য এই রোগকে ব্রংকোনিউমোনিয়াও বলা হয়।

কারণ :

অনেক কারণে নিউমোনিয়া হতে পারে।যেমন -

১.ভাইরাস, ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক সংক্রমণের কারণে নিউমোনিয়া হয়।

২.বৃষ্টিতে ভেজার কারণে।

৩.ঠান্ডা লাগার কারণেও নিউমোনিয়া হতে পারে।

৪.স্যাঁতসেঁতে পরিবেশ থেকে হতে পারে।

৫.আর্দ্র আবহাওয়া 

৬.কৃমির কারণে ও

৭.খাদ্য নালীতে খাবার পানি ,খাদ্য বা অন্য কিছু প্রবেশ করলেইত্যাদি কারণে এ রোগ হয়।

লক্ষণ :

১.আক্রান্ত পশুর প্রথমে অল্প অল্প জ্বর ও কাশি এবং পরে ঘনঘন কাশি দেয়।

২যখন বাছুর হাঁটাহাটি করে তখন বেশি পরিমাণে কাশি দেয়।

৩.নাক ও মুখ দিয়ে সাদা সর্দি বের হয়।

৪.খাবার প্রতি অনীহা আসে এবং খাবার কমিয়ে দেই।

৫.দ্রুত ও গভীর শ্বাস-প্রশ্বাস, কাশি ও শ্বাসকষ্ট দেখা দেয়।

৬.শ্বাস-প্রশ্বাসের সময় শব্দ হয়।

৭.আস্তে আস্তে নিস্তেজ হয়ে পড়ে এবং এক সময় মারা যায়।

প্রতিরোধ:

নানা কারণে নিউমোনিয়ার সংক্রমণ ঘটতে পারে। যেমন -

১.বসবাসের ঘর খোলা-মেলা ও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখতে হবে।

২.বদ্ধ, স্যাঁতসেঁতে ও আর্দ্র আবহাওয়ার মধ্যে গবাদিপশু রাখা যাবে না।

৩.যেকোন কারণে যেন ধকলে পতিত না হয় সেদিকে দৃষ্টি রাখতে হবে এবং গবাদিপশুদের কখনো মাত্রাতিরিক্ত পরিশ্রম করানো যাবে না। 

৪.বৃষ্টির পানিতে ভিজতে না পারে সেদিকে খেয়াল করা এবং গবাদিপশুর বাসস্থান এমন হতে হবে যাতে ঝড় বৃষ্টির সময় সেখানে পানি প্রবেশ করতে না পারে।

৫.খাবারের দিকে নজর রাখা পচা বা বাঁশী খাবার, ধুলাবালি ময়লা খাবার দেয়া উচিত নয় কারণ এ জাতীয় খাদ্যে ছত্রাক জন্মে যা থেকে রোগের সূত্রপাত ঘটতে পারে। 

৬.ঠাণ্ডার সময় ছোট বাছুরগুলোকে সাবধানে রাখতে হবে যাতে বাছুরের ঠান্ডা লাগতে না পারে।বাছুরকে শুকনো ও গরম স্খানে রাখতে হবে।

চিকিৎসা:

নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসা করার আগে কারণ জানতে হবে এবং রোগের মাত্রা অনুযায়ী ব্যাবস্থা গ্রহণ করতে হবে। তবে ভাইরাসজনিত নিউমোনিয়াতে কোন নির্দিষ্ট চিকিৎসা নাই। আবার মাইকোপ্লাজমার অবস্থান অন্তঃকোষীয় হওয়ায় মাইকোপ্লাজমার নিকট ওষুধ পৌঁছতে পারে না।

নিউমোনিয়া রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে বাজারে যে সমস্ত অনুমোদিত এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায় তা হলো -অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, ফ্লুরোকুইনোলন, ফেনিকল, ম্যাক্রোলাইড, সেফালোস্পেরিন ইত্যাদি চামড়া বা মাংসে ইনজেকশন দিতে হবে।

এন্টিবায়োটিক এর পাশাপাশি সহায়ক হিসেবে কর্টিকোস্টেরয়েড ও নন স্টেরয়েডধর্মী প্রদাহরোধী ওষুধ খুব ধীরে শিরায় বা মাংসে প্রদান করলে ভালো ফল পাওয়া যায়।এটা ব্যথা কমানোর পাশাপাশি খাদ্য গ্রহণ, জ্বর ও প্রদাহ প্রশমিত করে।এলার্জি প্রতিরোধে এন্টিহিস্টামিন ওষুধ ব্যবহার করা যায়। 

পরিশেষ বলবো আপনার পশুর কোনরকম লক্ষণ দেখা দিলে ভালো একজন পশু চিকিৎসক এর সরণাপর্ণ হন।

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.