গরুর খামার ও উন্নত জাতের গাভী। আজকের কথা

Cow Image- Ajker Kotha

নতূন উদ্যোক্তা যারা, মোটা তাজা বা ডেইরী ফার্ম শুরু করার আগে ও পরে কিছু বিষয় যা অতি গুরুত্ব সহকারে বিবেচনা করে নেবেন।

ফার্ম শুরু করার আগে আপনাকে প্রাথমিক কিছু ধারণা আছে যা ভালভাবে জেনে বুঝে তারপর শুরু করতে হবে । যেমন-

যদি আপনি ডেইরী ফার্ম করতে চান তাহলে

১) দুধের দাম কতঃ দুধ কত করে কেজি বা লিটার বিক্রি হয় আপনি যেখানে বসবাস করেন তা জানতে হবে। যদি দেখেন ৩৫-৪০ টাকা দাম হলে ফার্মকে লাভবান করা খুবই কস্টকর। যত বেশী দাম পাবেন আপনার ফার্ম তত লাভবান হবে।


২) দুধ বিক্রি করবেন কি করেঃ আপনার ফার্মের দুধ বিক্রি করবেন কি করে? গোয়ালার কাছে নাকি আপনাকে বাজারে নিয়ে  মিস্টির দোকানে গিয়ে বিক্রি করতে হবে? নাকি আপনি নিজেই দুধ দহন করে নিজেই মিস্টি ,ঘি দই বা অন্য কিছু বানাবেন এবং বাজারজাত করবেন?

আরো পড়ুনঃ 

৩) ঘাস চাষের ব্যবস্থা কিঃ খামার করার আগে  ঘাস চাষ করার জন্য পর্যাপ্ত জমি আছে কিনা? যদি থাকে তাহলে কি ঘাসের চাষ করা যাবে সে সম্পর্কে জানতে হবে, নেপিয়ার নাকি জার্মান বা অন্য ঘাস।

 ৪)চাষের জায়গাঃ যে জমিতে চাষ করবেন তা উচু না নিচু? বর্ষায় কি পানি জমে থাকে? যদি পানি জমে থাকে তাহলে নেপিয়ার ঘাস করা যাবেনা। আবার বছরে ৩-৪ মাস বর্ষায় ডুবে থাকলে জার্মান ঘাস ও করা যাবেনা। এ জন্য আপনাকে জমি হিসেবে ঘাস লাগাতে হবে।কারণ ডেইরি ফার্ম এর জন্য ঘাস দরকার ততটা যুদ্দোখেত্র অস্ত্র যতটা দরকার।

৫)যদি আপনি মোটাতাজা করনে যান তাহলে আপনার এলাকায় গোশত এর দাম কত জানতে হবে।

৬) চিকিৎসা ব্যাবস্থাঃ পশু হাসপাতাল বা ডাক্তার নিকটবর্তী আছে কিনা? আপনারা খামারে কোন সমস্যা দেখা দিলে তাড়াতাড়ি যোগাযোগ করতে পারবেন এমন ব্যাবস্থা রাখা,এবং ভালো আই টেকনিশিয়ান আছে কি না?


৭) গরুর খাবারঃখাবারের উপরে খামারের লাভ লচ অনেক টা নির্ভরশীল।নিকটবর্তী কোন গো-খাদ্যের পাইকারী বাজার আছে কিনা, থাকলে কেমন মানের খাদ্য পাওয়া যায়। আর এসব খাবারের দাম কেমন,পরিবহন খরজ কেমন সব মিলিয়ে দাম হিসাব করলে কেজি প্রতি গরুর খাবারের দাম কত আসে।


৮) কর্মচারীঃখামারে অভিজ্ঞ কর্মচারী কোথা থেকে জোগাড় করবেন সে বিষয় মাথায় রাখা, কর্মচারী বেতন, একজন কর্মী কয়টা গরু দেখাশোনা করতে পারবে সে সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখা, যে কয়টা কিনলে কর্মী দেখাশোনা করতে পারবে  সেই কয়টা গরু কেনার এবং বাড়তি যে টাকা লাগবে তা হাতে আছে কিনা তা ভেবে রাখা।

যদি আপনি দেখেন এগুলি আপনার পক্ষে সম্ভব তা হলে সামনের দিকে এগুতে পারেন।এখন আপনার দরকার সেড তৈরি এবং গরু কালেকশন


 সেড তৈরীঃ

 সেড কিভাবে তৈরী করবেন, গরু কি ছেড়ে পালবেন না সেড এর ভিতরে পালবেন।যদি সেডের ভিতর পালেন তাহলে সেড খোলামেলা এবং কতটা আধুনিক হবে এটা আপনার মূলধনের উপর নির্ভর।তবে আমার পরামর্শ সেড সাদামাটা করে শুরু করা।

 গরু সংগ্রহঃ 

ফার্ম এর লাভ নির্ভর করে গরু কালেকশনের উপর দুধের গাভী হোক আর মোটাতাজা করার জন্যে গরু হোক অবশ্যই ভালো জাতের হতে হবে।এর জন্যে আপনাকে গরু চিনতে হবে।কোনো দালালের মাধ্যমে গরু কিনা যাবে না যদিও কিনেন আপনাকে চিনে কিনতে হবে। ভাল জাতের গরু, দাম কেমন হবে, কি করে বুঝবেন যে কোনটা ভাল জাতের গরু , কোন জাতের গরু কেনা ভাল হবে ডেইরী ফার্মের জন্য আমাদের দেশের প্রেক্ষাপটে। কেউ তো ভাল গরু বিক্রি করে করেনা তাহলে ভাল গরু পেতে হলে কি করতে হবে? জাত উন্নয়ন করবেন কি করে এ বিষয়ে বিস্তারিত জানতে হবে।


 মূলধনঃ

 সর্বপরি সেড এবং গরু কেনার টাকা আপনার জোগাড় আছে কিনা যদি?যদি থাকে তাহলে পরামর্শ তাহলে শুরু করেন বুঝেশুনে।

কিছু প্রশ্নঃ

 ১:আপনি কি ব্যাংক লোন নিবেন প্রথমেই?

২:নাকি নিজের মূলধনের অর্ধেক এখন বিনিয়োগ করবেন?

৩:নাকি পার্টানারশীপ করবেন?

৪: ভবিষ্যতে যে সব ঝুকির সম্মুখীন হতে হবে তার জন্য পর্যাপ্ত টাকা হাতে আছে কিনা?

এ প্রশ্ন নিজেকে করুন আর উত্তর খুঁজুন।যদি আপনার মনে হয় না এ গুলি সমস্যা না থাকে শুরু করেন।

কিছু কথাঃ

 সব শেষ এবং অতি গুরুত্বপূর্ণ কিছু কথা বলি আপনি শুধু লাভ করার জন্য এই ব্যবসা করতে আসবেন না।আমি বলবো ভালোবাসা এবং ভালোলাগা থাকতে হবে সেই সাথে  আপনার ধৈর্য থাকতে হবে আর কঠিন সমস্যা মোকাবিলা করে লেগে থাকার মত মানসিকতা।


যদি মনে করেন ধৈর্য ধারণ করার ক্ষমতা কম, দ্রুত লাভ, ব্যবসা শুরুর আগেই মোটা অঙ্কের লাভের চিন্তা, মাঠ, গাছ-পালা, গোবরের গন্ধ আর চাষাভুষা লোকজন ভালো লাগবেনা, তাহলে অবশ্যই এই ব্যবসাতে আসবেন না। যারা বিদেশে আছেন আর কঠোর পরিশ্রম করেন যদি মনে করেন দেশে এসে আমি কিছু একটা করবো এবং বিদেশে যে ভাবে কঠোর পরিশ্রম করেছেন কর্মচারীদের মত নিজে কাজ করতে পারবেন, যেমনটা বিদেশে গিয়ে কস্ট করেন, তাহলে এই ব্যবসাতে আসতে পারেন লাভ হবে ইনশাল্লাহ।

আমি একজন ছোট খামারী মনে হলো কিছু লিখি,যদি কোনো ব্যাপারে জানবার দরকার হয় জানাবেন যদি সম্ভব হয় তাহলে জানাবো।

অধিক দুধের গাভী চিনার উপায়ঃআপনি যদি গাভী পালন করতে চান তাহলে আপনাকে গাভী চিনতে হবে। আমাদের দেশে বিভিন্ন ধরনের গাভী পাওয়া যায়।যদি গাভী নির্বাচন ভুল হয় তাহলে খামারে লচ গুনতে হবে। খামার কিংবা ব্যক্তিগত পর্যায়ে এসব গরু পালন করা হয়। খামারিরা অধিক দুধ দেয়া গাভী চেনার কৌশল থাকলেও অনেকে জানে না।


দুধ দেয়া গাভীর বৈশিষ্ট্যঃ

 ও স্কোরকার্ড দেখে নির্বাচন করা যায়। অধিক দুধ দেয়া গাভীর শারীরিক গঠন ও কয়েক বিশেষ বৈশিষ্ট্য দেখে দুধ উৎপাদন সম্পর্কে প্রায় নিশ্চিত ধারনা পাওয়া যায়।

বেশী উৎপাদনশীল গাভী নির্বাচনের জন্য গুরুত্বপুর্ণ বৈশিষ্ট্যগুলো-

মাথাঃ

 মাথা হালকা ও ছোট আকারের হতে হবে, কপাল প্রশস্ত ও উজ্জ্বল চোখ হবে।


দৈহিক আকৃতিঃ

 দেহের সামনের দিক হালকা হতে হবে, পিছনের দিক ভারী ও সুসংগঠিত হবে। গাভীর সমস্ত অংগ প্রতঙ্গ সামঞ্জস্যপূর্ণ ও সুগঠিত হবে। দৈহিক আকার আকৃতি অনেক আকর্ষণীয় ও শরীরের গঠন ঢিলা হবে।

পাঁজরঃ 

পাঁজরের হাড় স্পষ্ট দেখা যাবে বা অনুভব করা যাবে চামড়ার নিচে থেকে দেখা যাবে।


চামড়াঃ

 চামড়া পাতলা হবে এবং এবং চামড়া ঢিলা হবে । চামড়ার নিচে অহেতুক কোন চর্বি জমা থাকবে না। চামড়ার রং উজ্জল হবে। লোম গুলি মসৃণ ও চকচকে হবে।

ওলানঃ

 ওলান আকৃতিতে বড় ও সুগঠিত এবং দেহের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। পিছনের দুই পায়ের মাজখনের স্থান প্রশস্ত হবে। বাটগুলো সব একই আকারের হবে। চারটি বাট সমান দূরত্বে ও সমান্তরাল হবে। ওলান দেখেই দুগ্ধ ধারন ক্ষমতা কেমন অনুমান করা যাবে।


দুগ্ধ শিরাঃ

 দুগ্ধ শিরা মোটা ও স্পষ্ট অনুভূত হবে। নাভীর পাশ দিয়ে দুগ্ধ শিরা গুলি আঁকাবাঁকা ভাবে বিস্তৃত থাকবে।





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.