গাভীর ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকিৎসা ব্যাবস্থা।আজকের কথা



গাভীর ওলানের ফোলা রোগ:

গাভীর ওলান ফোলা রোগের লক্ষণ, প্রতিরোধ ও চিকৎসা সম্পর্কে কিছু কথা।

গাভীর ওলান ফোলা হলো একধরণের মারাত্ত্বক ক্ষতিকর রোগ যা গাভী এবং বাচ্চার জন্য খুবই মারাত্মক ক্ষতিকর। বিভিন্ন প্রকার জীবাণু,যা দ্বারা গাভীর ওলান ফোলা রোগে আক্রান্ত হতে পারে। আর এ রোগ দেখা দিলে দ্রুত উপযুক্ত চিকিৎসার অভাবে গরুর ওলান আংশিক বা সম্পূর্ণভাবে নষ্ট হয়ে যেতে পারে এমনকি গাভী মারাও যেতে পারে। এ রোগ একটি গাভীর যে কোনো সময় হতে পারে। তবে বাছুর প্রসবের পরেই গাভী বেশি আক্রান্ত হয় থাকে।


রোগের কারণ:

গাভীর উলান ফলার কিছু কারণ উল্লেখ করা হলো

১.বিভিন্ন প্রকারের ব্যাকটেরিয়া, ফাংগাস, মাইকোপ্লাজমা ও ভাইরাসের কারনে এ রোগ সৃষ্টি হয়ে থাকে।

 ২.সেডের পরিষ্কার পরি্ছন্নতা যদি ঠিক না থাকে, মেঝে দীর্ঘ সময় ধরে সেঁতসেতে ও ভিজা থাকে।

৩.ওলানের বাঁট দূষিত মেঝের সংষ্পর্শে আসার মাধ্যমে।

৪. দুধ দোহনকারীর হাত আথবা  দুধ দোহনের যন্ত্রের মাধ্যমে জীবাণু সরাসরি ওলানে সংক্রমণ ঘটাতে পারে।

৫.গাভী যখন শুইবে তখন তার ওলান দিয়ে জীবানু ঢুকতে পারে তার থেকে ওলান ফুলে যেতে পারে।

৬.ওলানে বা বাঁটে আঘাতজনিত বা বাছুর এর দূধ খাবারের সময়  ক্ষত হলে।

৭.ক্ষুরারোগের ফলে সৃষ্ট ক্ষত।

৮.দীর্ঘ সময় ওলানে দুধ জমা থাকলেও এ রোগ হতে পারে।

৯.কোনো কারণে বাঁটের মধ্যে কোনো শলা বা কাঠি প্রবেশ করালেও গাভী এ রোগে আক্রান্ত হতে পারে।

পরিশেষে কথা বলবো এজন্য স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশে রাখার কোনো বিকল্প নেই।

লক্ষণঃ

১.ওলান ফুলে শক্ত ও গরম হয়ে লাল বর্ণ হয়ে যায়।

২. গাভী দহনের সময় কখনও পুজের মত বা রক্ত মিশ্রিত হয়ে বের হবে।

৩ কখনও কখনও দুধের পরিবর্তে টাটকা রক্ত বের হয়।

৪. ওলানে ব্যথা হয়।

৫. দুধ কমে যায় এমনকি বন্ধও হয়ে যায়।

৬.গাভীর তাপমাত্রা বৃদ্ধি পায়।

৭.হাত দ্বারা ষ্পর্শ করলে গরম অনুভূত হবে। 

৮.ওলানে হাত বা কোনো কিছুর হালকা আঘাত লাগলে প্রচন্ড ব্যথা থাকে এ কারণে গাভী ওলানে হাত দিতে দেই না। 

৯.ওলানের সামনে পানি জমেasrtgyuijhgko যায়।

১০.পানির মত দুধ, পুঁজ বা রক্তযুক্ত দুধ বের হয়। 

১১.তীব্র রোগে ওলানে পচন ধরতে পারে।

১২.দুধ  ছাঁকলে জমাট বাঁধা দুধ দেখা যায়। এমন কি বাছুরকেও দুধ দেয় না।

১৩. দুধের রং লাল বা গোলাপি বর্ণ হয়ে যায়।

১৪.দুধের মধ্যে ছানার মত কিছু জমে থাকতে পারে।

১৫.গাভীর খাদ্য গ্রহণে অরুচি দেখা দেয়। ১৩.তীব্র ভাবে আক্রান্ত ওলানে গ্যাংগ্রিন হয়ে খসে যায়। 

সবশেষে বলবো ভালো ভাবে চিকিৎসা না করলে গাভীর মৃত্যুও হতে পারে।

চিকিৎসাঃ

উপরের লক্ষণ দেখা দিলে খুব দ্রুত  চিকিৎসা প্রদান করতে হবে। এ রোগে এ্যান্টিবায়োটিক প্রদান করতে হবে। জেন্টামাইসিন ও কিটোটিফেন জাতীয় ওষধ প্রয়োগ করলে ভালো ফল পাওয়া যায়। ১২ ঘন্টার মধ্যে এর চিকিৎসা করতে হবে। এর বেশি দেরি হলে এ রোগের তীব্রতা বৃদ্ধি পাবে তখন আপনার গাভী ক্ষতিগ্রস্ত হবে।অবশ্যই অভিজ্ঞ প্রাণিচিকিৎসকের পরামর্শক্রমে  চিকিৎসা ব্যবস্থা নিতে হবে।সবসময় মনে রাখবেন এ রোগটি বেশ ক্ষতিকর তাই

 হাতুরে ডাক্তারের চিকিৎসার মারত্মক ক্ষতি হতে পারে। এ রোগটি জটিল প্রকৃতির বিধায় পশুচিকিৎসকের পরামর্শমত চিকিৎসা করাতে হবে।

প্রতিরোধঃ

চিকিৎসার চেয়ে প্রতিরোধের জন্য কাজ করতে হবে। একটি ডেইরী ফার্মে একাধিক গুরুত্বপূর্ণ ব্যবস্থা নিলে এ রোগ নিয়ন্ত্রণ সম্ভব। বাঁটের স্বাস্থ্যসম্মতব্যবস্থাপনা অনুসরণ করতে হবে এবং সেডের পরিষ্কার পরি্ছন্নতা ঠিক রাখা মেঝে দীর্ঘ সময় সেঁতসেতে ও ভিজা না থাকে সে দিকে খেয়াল রাখা।,

বাসস্থান উন্নত ও স্বাস্থ্যসম্মত হতে করা। জীবাণুমুক্ত দুধ দোহন ব্যবস্থা অনুসরণ করতে হবে। ওলান ও বাঁটের স্বাস্থ্য রক্ষাসহ যে কোনো রোগ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে। খুব দ্রুত এ রোগ সনাক্ত করতে হবে এবং দ্রুত উন্নত চিকিৎসা সেবা প্রদান করতে হবে। অসুস্থ গাভীকে আলাদা জায়গায় রাখতে হবে। গাভীর ক্ষেত্র দুধ দোহনের শেষ দিনে বাঁট বন্ধ করে দিতে হবে ।

এ রোগে আক্রান্ত হওয়া গাভী, যে গুলিকে সম্পূর্ণ ভালো করা সম্ভব হচ্ছে না সে গুলিকে ছাঁটাই করতে হবে। যারা গাভী দহন করবে তাদের হাত,শরীর ,কাপড়সহ সবকিছু পরিষ্কার রাখতে হবে।গাভী দহনের আগে হতে জীবাণুনাশক ব্যাবহার করতে হবে।

প্রিয় খামারি ভাইয়েরা মনে রাখতে হবে গাভী বা গরুর যে কোন সমস্যা হলে প্রথমে আপনাকে যেতে হবে স্থানীয় প্রাণিসম্পদ অফিসে এবং তাদের কাছে বলতে হবে এবং অভিজ্ঞদের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে আপনাকে সেবা দিতে হবে। আর যদি আমাদের সহযোগিতা চান তাহলে আমাদের ইনবক্সে যোগাযোগ করবেন ইনশাআল্লাহ আমরা সুপরামর্শ দেবার চেষ্টা করবো।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.