গবাদি পশুর শক্ত জিহ্বা রোগের চিকিৎসা

  


শক্ত জিহ্বা বা Wooden tongue কি?


শক্ত জিহ্বা(Actinobacillosis) প্রচলিত নাম শক্ত জিহ্বা বা Wooden tongue। শক্ত জিহ্বা রোগটি প্রাপ্তবয়স্ক গবাদি পশুদের মুখের কোমল টিস্যুর একটি রোগ। এটি অ্যাক্টিনোব্যাসিলোসিস লিগনিয়েরেসি দ্বারা সৃষ্ট, যা উপরের পাচনতন্ত্রের সাধারণ ব্যাকটেরিয়া উদ্ভিদের অংশ।

শক্ত জিহ্বা রোগের কারণ:

এক্টিনোব্যাসিলাস লিগনিয়ারেসি নামক ব্যাকটিরিয়া এ রোগের কারণ। 

শক্ত জিহ্বা রোগের বিস্তার:

  1. সাধারণত লাঠি বা খড় বা অন্য কিছু দ্বারা সৃষ্ট আঘাতের কারণে মুখ গহ্বরের ভিতর ক্ষত তৈরি হয় এবং উক্ত স্তান ব্যাকটেরিয়া মাধ্যমে আক্রান্ত হতে পারে।
  2. দূষিত খাদ্য ও পানির মাধ্যমে এ রোগ জীবাণু সংক্রমিত হতে পারে। 

শক্ত জিহ্বা রোগের লক্ষণঃ

  1. গরুর খাওয়া বা পান করতে অক্ষমতা দেখা যায়।
  2. জিহ্বায় প্রদাহের ফলে বেদনাদায়ক এবং জিহ্বা ফুলে উঠে, ক্ষত হয় এবং ক্ষত হতে ঢাল/লালা ঝরে ৷
  3. জিহ্বা মোটা ও শক্ত হয় ৷
  4. মোটা এবং শক্ত হবার কারণে জিহ্বা নড়াচড়া করতে পারে না ৷
  5. দীর্ঘ মেয়াদী ক্ষেত্রে মুখ থেকে জিহ্বা বেরিয়ে আসে ৷
  6. সংক্রমণ দীর্ঘস্থায়ী হওয়ার সাথে সাথে তন্তুযুক্ত টিস্যু জমা হয় এবং জিহ্বা সঙ্কুচিত এবং অচল হয়ে পড়ে এবং খাওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
  7. স্থানীয় ফোস্কাগুলি বড় হতে পারে এবং ফোড়া তৈরি হতে পারে ।ফোড়া ফেটে ক্রিমি পুঁজ নিঃসরণ করতে পারে, যাতে দানা থাকতে পারে।
  8. চোয়াল, ফুসফুস, খাদ্যনালীর খাঁজ প্রভাবিত হতে পারে। কখনও কখনও ত্বকীয় রোগে প্রধানত মুখ, মাথা, বক্ষঃস্থল ও উরুর ত্বক আক্রান্ত হয়।অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলির কোথাও ঘটতে পারে।
  9. নাসিকা গ্রন্থি আক্রান্তের ক্ষেত্রে শ্বাস নেয়ার সময় গড় গড় শব্দ হয় এবং শ্বাসকষ্ট হয়।
  10. নাসিকা গ্রন্থি (গলার নিচে, কানের নিচে থাকে) আক্রান্তের ক্ষেত্রে ফোলা অবস্থা, তাপযুক্ত ও ব্যথাহীন ফোড়া সৃষ্ট হতে দেখা যায়।
  11. অবস্থার দ্রুত অবনতি হতে দেখা যায়
  12. জিহ্বায় আলসার দেখা যায়। রোগের তীব্র পর্যায়ে প্রাণীরা মাঝে মাঝে অনাহারে এবং পিপাসায় মারা যেতে পারে।  

চিকিৎসা:

রোগ দেখা দেবার সাথেই প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করা গুরুত্বপূর্ণ, কারণ রোগ প্রকট হলে চিকিৎসা ব্যর্থ হতে পারে। সবচেয়ে সাধারণ চিকিৎসা হল আয়োডিন থেরাপি বা টেট্রাসাইক্লাইন। 

অন্যান্য চিকিৎসা:

 

  • সোডিয়াম আয়োডাইড ১০% (১০ গ্রাম ১০০ মিঃলিঃ পানির সাথে মিশাতে হবে) দ্রবন দৈহিক ওজন হিসাবে আক্রান্ত পশুর শিরায় ইনজেকশন দিতে হবে।অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
  • সালফোনেমাইড ইনজেকশন যেমন: ডায়াডিন, ডিমিডিন প্রতি ৫০ কেজি দৈহিক ওজনের জন্য ১৫-৩০ মিঃলিঃ হিসাবে শিরায় ইনজেকশন দিতে হবে মোট ৩ দিন তা অবশ্যই পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী।
  • অস্ত্রপচারের মাধ্যমে। 
  • অস্ত্রপচারের মাধ্যমে ফোড়ার পুঁজ বের করে টিনচার আয়োডিন যুক্ত গজ প্রয়োগ করে এ রোগের চিকিৎসাই অধিক ফল পাওয়া যায়। একদিন পর পর গজ বদল করতে হবে। 

গবাদি পশুর শক্ত জিহ্বা রোগের প্রতিরোধঃ 

১.রোগাক্রান্ত পশুর দ্রুত চিকিৎসা করে এ রোগের সংক্রমণ দ্রুত প্রতিরোধ করা যায়।
২.পশুর খাদ্য ও পানি যাতে ময়লা বা দূষিত না হয় তার ব্যবস্থা করতে হবে।
৩.এই রোগের চিকিৎসার জন্য কোন ভ্যাকসিন নেই। প্রাথমিক সনাক্তকরণ এবং দ্রুত চিকিৎসা বা সংক্রামিত প্রাণীদের আলাদা করার দ্বারা নিয়ন্ত্রণ সর্বোত্তমভাবে অর্জন করা সম্ভব।



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.