পশুর বাদলা রোগ সম্পর্কে কিছু তথ্য।

প্রারম্ভিক লক্ষণ: উরুর ফোলা, পা উপরে এবং লেজ উত্থাপিত (তীর)

সমস্ত নেক্রোটিক টিস্যু অপসারণের পর (ছবি -উইকিপিডিয়া)
বাদলা রোগঃ
গরুর ব্যাকটেরিয়াজনিত সংক্রামক রোগ।গবাদিপশুর মারাত্মক রোগগুলোর মধ্যে বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার (Black Quarter) একটি অন্যতম।এটি একটি গ্রাম-পজিটিভ ব্যাকটেরিয়া।এ রোগে পশু মৃত্যুর হার অনেক বেশি।বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার (Black Quarter)ব্যাকটেরিয়াজনিত মারাত্মক সংক্রামক রোগ।পর্যাপ্ত ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে এ মৃত্যুর হার ১০০ ভাগই।ঘাতক এ রোগটির জন্য দায়ী ক্লোস্টোডিয়াম চোউভি (Clostridium chauvoei) নামক ব্যাকটেরিয়া।
রোগ বিস্তারঃ
বাদলা বা ব্লাক কোয়াটার (Black Quarter)মারাত্মক সংক্রামক রোগ যা প্রায় সারা বিশ্বেই ছড়িয়ে আছে।কিছু কিছু দেশে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও খাদ্যাভ্যাসের কারণে কম সংক্রমিত হয়। তবে বাংলাদেশের মতো দেশে এ রোগের প্রকোপ অনেক বেশি।
করা আক্রান্ত হয়ঃ
এটি সারা বিশ্বের পশুদের মধ্যে দেখা যায়, সাধারণত গবাদি পশু ভেড়া,মহিষ এবং ছাগলকে প্রভাবিত করে।এটি এমন রোগ যা সাধারণত হৃষ্টপুষ্ট পশুতেই বেশি হয়ে থাকে। যাদের বয়স ৬ মাস থেকে ১/২ বছরের মধ্যে। এ সময় গরুর মাংস পেশি অনেক ভালো থাকে। যার ফলে ব্যাকটেরিয়া প্রবেশ করলেই খুব দ্রুত বংশবিস্তার করে রোগের বিস্তার করে। ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এ রোগ যে কোনো বয়সে হতে পারে।গবাদিপশুর ক্ষেত্রে ১০ বছর বয়সের পর এ রোগের সম্ভাবনা খুবই কম থাকে। সাধারণত এ রোগে গরুর ক্ষেত্রে ৩ মাস থেকে ২ বছরে বয়সের গরুর বেশি হয়।
রোগের উৎসঃ
দূষিত চারণভূমি সংক্রমণের প্রধান উৎস বলে মনে করা হয়।তাছাড়া দূষিত খাবার ও পানির মাধ্যমেও এ রোগ হতে পারে।ছাগল ও ভেড়ার ক্ষেত্রে এ রোগের জীবাণু বিভিন্ন ধরনের ক্ষতের মাধ্যমে শরীরে প্রবেশ করে যেমন -শিং কাটার সময়,বাচ্চা প্রসবের সময় এবং অন্যান্য অপারেশনের সময় বা অপারেশনের পরে।
রোগের লক্ষণ:
১.আকস্মিক উচ্চ জ্বর (107ºF-108ºF) তাপমাত্রা দেখা যায়
২.প্রাণীটি খাওয়া বন্ধ করে দেয়।
৩.শরীরের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে পেছনের অংশে মাংসপেশি ফুলে যায়।
৪.কখনো কখনো কাঁধ, বুকে এবং ঘাড়কেও প্রভাবিত করে।
৫.ফোলাতে চাপ দিলে গ্যাস জমে যাওয়ার কারণে কর্কশ শব্দ শোনা যায়।
৬.আক্রান্ত স্থান ফুলে উঠে এবং ফুলে উঠা মাংসপেশি গরম অনুভূত হয়।
৭.বৈশিষ্ট্যগত গরম ও বেদনাদায়ক ফুলে যাওয়ার কারণে প্রাণী খোঁড়াতে থাকে।
৮.আক্রান্ত অংশ কালচে হয়ে যায় ও পঁচন ধরতে দেখা যায়।
৯.আক্রান্ত স্থানে ফুটা করলে পঁচা, দূর্গন্দযুক্ত,কালো রক্ত দেখা যায়;
১০.রোগাক্রান্ত প্রাণী দুর্বল হয়ে মারা যায় এবং
১১.অতি তীব্র প্রকৃতির ক্ষেত্রে রোগের লক্ষণ প্রকাশের কয়েক ঘণ্টার মধ্যে পশু মারা যায়। এমনকি ১-২ ঘণ্টার মধ্যে পশু কোনো লক্ষণ প্রকাশ না করেই মারা যায়।

নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ ব্যবস্থাপনাঃ
কিছু পদক্ষেপ নিলে এ রোগ থেকে অনেকখানি দূরে থাকা যায়।যেমন -
১.স্থানীয় অঞ্চলে বর্ষা শুরুর আগে গরুর ক্ষেত্রে তিন মাসের বেশি বয়সের বাচ্চাকে ৫ মিলি বাদলা ভ্যাকসিন চামড়ার নিচে দিতে হবে ছয় মাস পরপর। ছাগল ভেড়ার ক্ষেত্রে ২ মিলি চামড়ার নিচে ৬ মাস পরপর ।
বিঃদ্রঃ -প্রথম ডোজ দেয়ার ৪ সপ্তাহ পর দ্বিতীয় ডোজ দিলে তার কার্যকারিতা এক বছর পর্যন্ত স্থায়ী হয়।
২.স্পোর নির্মূল করার জন্য খড় দিয়ে মাটির উপরের স্তর পুড়িয়ে দিলে এ রোগ থেকে স্থানীয় ভাবে রোগ মুক্তির জন্যে বেশ সহায়ক হতে পারে।
৩.যদি কোনো গবাদি পশু রোগাক্রান্ত হয় তাহলে দাফনের সময় মৃতদেহের উপর চুন ছিটিয়ে দিন।
৩.আক্রান্ত পশুকে আলাদা করে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।
৫. প্রাণীর খাবার পাত্র ও খাবার উপাদান ঠিকমতো পরিষ্কার করে এবং দেখে শুনে খাওয়াতে হবে।
৬.পানিতে ডুবে যাওয়া বা ময়লা স্থানের ঘাস না খাওয়ানো ভালো।
চিকিৎসাঃ-
রোগের লক্ষণ প্রকাশের সঙ্গে সঙ্গে চিকিৎসা নিতে হয়। বিলম্ব না করে উপসর্গ দেখা দেয়া মাত্রই চিকিৎসা নেয়া প্রয়োজন। অ্যান্টিব্লাকলেগ সিরাম আক্রান্ত পশুর সিয়ার ১০০-২০০ মিলিলিটার ইনজেকশন দিতে হবে।
অ্যান্টিসিয়াম পাওয়া না গেলে অ্যান্টিবায়োটিক দিয়ে চিকিৎসা করা যায়। এক্ষেত্রে-
১. পেনিসিলিন গ্রুপের ওষুধ বেশ ভালো কাজ করে থাকে।
২.হিস্টামিনের প্রভাব কমানোর জন্য অ্যান্টিহিস্টামিন দেয়া যেতে পারে।
৩. আক্রান্ত ক্ষতস্থান অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে পরিষ্কার করে টিংচার আয়োডিন গজ প্রয়োগ করতে হবে।
৪.পশু খুব দুর্বল হলে ৫ অথবা ১০ বা ২৫ ডেক্সট্রোজ/গ্লুকোজ দিলে যকৃতে গ্লাইকোজেনের পরিমাণ ঠিক রাখতে সাহায্য করে যা বিষক্রিয়া খুব সহজেই দূর করা সম্ভব।
৫. আক্রান্ত পেশি কেটে মৃত টিস্যু কেটে ফেলে দিয়ে তাতে জীবাণু মুক্ত দ্রবণ দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে। যেমন -পটাশিয়াম পারমাঙ্গানেট দ্রবণ অথবা হাইড্রোজেন পারকসাইড দ্বারা দিনে দুইবার ধুয়ে ফেলতে হবে।
সংক্রমণের প্রাথমিক পর্যায়ে চিকিৎসা কার্যকর হতে পারে।গরুর বাদলা রোগ মারাত্বক সংক্রামক রোগ হলেও চিকিৎশায় এই রোগ ভালো হয়।
আরও পড়ুন -
টিকার তালিকা সম্পর্কে
Link-https://ajkarkotha.blogspot.com/2022/09/list-of-vaccinations.html




Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.