পুলাস,বল বা জরায়ু বের হওয়া।

 


 আজ আমার আলোচনার বিষয় গাভীর পুলাস বা জরায়ু বের হওয়া।আবার কোনো কোনো এলাকায় বল বের হওয়া নামে পরিচিত।এটি মূলত গাভীর গর্ভকালিন সময় এর রোগ তবে কোনো কোনো গাভীর বাচ্চা হবার পরও দেখা যায়।কোনো কোন গাভীর গর্ভকালীন সময়ে রোগটি ছিল,আবার পরবর্তীতে বাচ্চা দেবার পর গাভী যখন হিট আসে তখন বের হতে দেখা যায়।
জরায়ু বের হওয়া কি?
গাভীর বাচ্চা প্রসবের পর যোনীপথ দিয়ে জরায়ু বের হয়ে আসাকে Uterine Prolapse বলে। তবে কিছু কিছু গাভী গর্ভকালিন সময়ে শুয়ে থাকলে আংশিক বের হতে দেখা যায় এবং দাড়িয়ে গেলে আবার ভেতরে ঢুকে যায়।আবার কোনো কোনো গাভীর সম্পূর্ণ বের হতে দেখা যায়। যেসব গাভীর সম্পুর্ন বের হয়ে আসে সেসব গাভীতে অভিজ্ঞ পশু সিকিৎসক দ্বারা জরায়ু ভেতরে সময় মত না ঢুকালে অবশেষে রক্তক্ষরন হয়ে মারা যায়। এ রোগের কারন লক্ষন চিকিৎসা ও প্রতিরোধ নিয়ে কিছু আলোচনা করবো ইনশাআল্লাহ।
কারণ:
১.গাভীর শরীরে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাসের অভাবে এ রোগ হয়।
২.বার বার বীজ দেওয়া বা কোনো কারনে জরায়ু তে ইনফেকশন দেখা দিলে।
৩.বাচ্চা হওয়ার সময় অতিরিক্ত কোঁথ দিলে।
৪.প্রসবের সময় বাচ্চা হ্যাচকা টান দিয়ে বের করলে।
৫.জরায়ুতে যদি অত্যাধিক চর্বি জমে।
৬.বাচ্চার সাইজ যদি বড় হয় এবং আটকে যায় তাহলে।
৭.গাভী গর্ভকালীন সময় দুর্বলতা ও অপুষ্টিতে ভুগলে জরায়ু বের হতে পারে।
৮.গর্ভফুল আটক বা অনভিজ্ঞ লোকের দ্বারা প্রসব করালে।
৯গর্ভকালীন সময়ে গাভীকে পরিমাণ মতো কাঁচা ঘাস না খাওয়ালে এই রোগ হতে পারে।
১০.গাভীর থাকার পিছনের জায়গা অধিক পরিমাণ ঢালু হলে সেখানে গর্ভকালীন গাভী দীর্ঘ দিন থাকলে এই রোগ দেখা দেয়।
১১গাভীর প্রসব বিঘ্ন হলে ইত্যাদি।
লক্ষণ: . 
১.যোনীপথে জরায়ুর আংশিক অংশ বের হতে দেখা যাবে এবং এক পর্যায়ে সম্পুর্ন জরায়ু বের হয়ে যাবে।
২.শুয়ে থেকে জোরে জোরে কোঁথ দিতে থাকবে।
৩.জরায়ু উল্টো হয়ে বের হতে দেখা যায় ।উল্টো বের হওয়ার কারনে গোটা গোটা দেখা যাবে।
৪.বাচ্চা প্রসবের পর আর দাড়িয়ে থাকতে পারে না বিধায় শুয়ে পড়ে।
৫.বাচ্চা প্রসবের পর ঘন ঘন কোথ দিলে ও জরায়ু বাহির হওয়ার সম্ভবনা থাকে।
প্রতিরোধ ব্যবস্থাঃ
মনে রাখতে হবে চিকিৎসা পর্যন্ত যাবার আগেই যদি রগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা গড়ে তোলা যায় তাহলে ভালো হয়।এর জন্য যা করা প্রয়োজন তা হলো:
১.গর্ভকালীন সময় গাভীকে আলাদা ভাবে যত্ন নিতে হবে এবং ৩ মাস গর্ভকাল থেকেই গাভীকে ক্যালসিয়াম ও ফসফরাস ঘাটতি যেন না থাকে তা খেয়াল রাখতে হবে।
২.যদি ক্যালসিয়ামের অধিক পরিমাণ ঘাটতি থাকে অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসক দিয়ে শিরায় ক্যালসিয়াম দিতে হবে।
৪.গাভীকে সুষম খাবার ও কাঁচা ঘাস খাওয়াতে হবে।
৫.গাভীর থাকার জায়গা পিছনের দিক অধিক বেশি ঢালু যেনো না হয় তা খেয়াল রাখতে হবে।
৬.অভিজ্ঞ লোক দ্বারা বাচ্চা প্রসব করাতে হবে।
৭.যদি গর্ভকালীন অবস্থায় গাভীর জরায়ু শুয়ে থাকলে অল্প দেখা যায় তাহলে গাভীকে খাবারের পরিমাণ কমকম করে দিয়ে তিন থেকে চার বার দেওয়া যাতে গাভীর পুষ্টির কোনো অভাব না থাকে।

চিকিৎসা:
১.গর্ভকালিন সময়ে যেসব গাভী শুয়ে থাকলে জরায়ু বের হয় Calcium এবং 10% Dextrose Saline সহযোগে ধীরে ধীরে রক্ত শিরায় দিতে হবে।
২.inj: Newdecaphosphen চার দিন পরপর মাংশে অথবা শিরায় তিন ডোজ। 
৩.উক্ত চিকিৎসা দেওয়ার পরও যদি জরায়ু বের হওয়া বন্ধ না হয় তাহলে যোনীপথ সুতা দিয়ে সেলাই করে রাখতে হবে।এবং গর্ভাবস্থায় ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ খাবার দিতে হবে। 
যদি সম্পুর্ন জরায়ু বের হয় জরায়ুপলিথিনের উপরে নিয়ে এন্টিসেপটিক যুক্ত ঠান্ডা পানি দ্বারা পরিস্কার করতে হবে।
৪.যদি ফুলে যায় , চিনি অথবা বরফ দিয়ে কিছুক্ষন চেপে ধরতে হবে। এতে করে জরায়ু ছোট হয়ে যাবে এবং যোনীপথ দিয়ে ঢুকাতে সহজ হবে।
৫.জরায়ু ঢুকানোর সময় যদি গাভী কোঁথ দিতে থাকে তাহলে inj: Nospa 15ml মাংশে দিয়ে নিতে হবে। যদি তাতেও কোঁথ দেয়া বন্ধ না হয় তাহলে 5% Dextrose saline সহযোগে Calcium forte-m 100cc ধীরে ধীরে রক্ত শিরায় দিলে সম্পুর্ন কোঁথ দেয়া বন্ধ হবে।
জরায়ুকে সঠিক স্থানে স্থাপন করতে হবে এবং ৪টি রেনামাইসিন ট্যাবলেট জরায়ুতে ঢুকিয়ে দিতে হবে।এর পর যোনীর উপরের অংশ মোটা সুতা দ্বারা সেলাই দিতে হবে যাতে পুনরায় জরায়ু বের হতে না পারে।
৬.গাভীকে এমন জায়গায় থাকবার ব্যাবস্থা করতে হবে যেন পিছন দিক উচু ও সামনের দিক নিচু থাকে।
৭.জরায়ুতে যাতে কোন সংক্রমন হতে না পারে এজন্য পেনিসিলিন গ্রুপের inj: Penbacllin দৈহিক 100kg/2.5cc করে ২৪ ঘন্টা পরপর মাংশে দিতে হবে ৪/৫ দিন।
বি: দ্রঃ:INTAS PHARMACEUTICALS LTD এর HYPORID POUDER গভীর গর্ভবতী অবস্থায়( ৩ মাস এবং ৭ মাসে )খাওয়াতে পারেন উপকার পাবেন ইনশাল্লাহ।

আরও পড়ুন ----



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.