গলাফোলা রোগের কারণ, লক্ষণ, প্রতিকার



গলাফুলা রোগ কি?

এটি একটি ব্যাকটেরিয়াজনিত রোগ।যা

পাস্তুরেলা মাল্টোসিডা (Pasteurella multocida ) নামক এক ধরনের গ্রাম নেগেটিভ ব্যাকটেরিয়া দ্বারা সংঘটিত হয়।

গলাফুলা একটি তীব্র প্রকৃতির রোগ যা গরু এবং মহিষকে আক্রান্ত করে।গলাফুলা মূলত গরু ও মহিষের রোগ হলেও শুকর, ছাগল, ভেড়া, ঘোড়া, বাইসন, উট, হাতী এমনকি বানরেও এ রোগ হতে পারে। এই রোগ কে অনেকেই গ্রামের ভাষায় টুটি ফোলা বা চোয়াল ফুলা রোগ বলে।এছাড়াও ব্যাংগা, ঘটু, গলগটু, গলবেরা ইত্যাদি নামে পরিচিত। এই রোগ হলে গরুর থুতনি বা টুটি ফুলে যায়। এ রোগে মৃত্যুর হার খুবই বেশি।

রোগের বিস্তার:

সাধারণত বর্ষা কালের শুরু ও শেষে গরুর গলাফুলা রোগের প্রদূর্ভাব বেশি দেখা য়ায়।পশুর শরীরে স্বাভাবিক অবস্থায় এ রোগের জীবাণু বিদ্যমান থাকে।সারা পৃথিবীতে এই রোগের বিস্তার দেখা যায়।আমাদের পার্শবর্তি দেশ ভারতে গবাদিপশুর গলাফুলা রোগের বিস্তার অনেক বেশি। আক্রান্ত পশু থেকে সুস্থ্য পশুতে এই ব্যাকটেরিয়া টি সহজেই ছড়াতে পারে। এই ব্যাকটেরিয়া মাটি ও বাতাসের মাধ্যমেও ছড়ায়।আফ্রিকা, দক্ষিণ ইউরোপের কিছু অংশে এবং মধ্য প্রাচ্যের ভিতরও এই রোগ দেখা যায়।বাহক পশুর টনসিল ও ন্যাজো-ফ্যারিনজিয়াল মিউকোসায় এ রোগের জীবাণু থাকে। অনুকূল পরিবেশে রক্তে এ রোগের জীবাণুর সংখ্যা বেড়ে গিয়ে রক্তদূষণ করে। । এই বৃদ্বিপ্রাপ্ত জীবাণু মরে গিয়ে এন্ডোটক্সিন নিঃসৃত হয় যার ফলে রক্ত দূষিত হয়ে পড়ে। এন্ডোটক্সিন রক্তের ক্যাপিলারিস নষ্ট করে,ফলে এডিমা হয়। এছাড়া এন্ডোটক্সিন একদিকে যেমন কোষ কলা নষ্ট করে দেহে হিস্টামিনের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয় অন্যদিকে টিস্যু বিনষ্টের ফলে টিস্যুর প্রোটিন ভেঙ্গে রক্তে প্রোটিনের পরিমাণ হ্রাস পায়। ফলে, এডিমার সৃষ্টি হয়। সে কারণে এ রোগে আক্রান্ত পশুর গলা ফুলে যায় ও রক্তে জীবাণুর উপস্থিতির কারণে পশুর দ্রুত মৃত্যু হয়।


কারণ:

১.যদি পশু ধকল যেমন ঠান্ডা, অধিক গরম, ভ্রমণজনিত দুর্বলতা ইত্যাদি স্ট্রেজ বা পীড়নের সৃষ্টি হয় তাহলে এই রোগ দেখা দিতে পারে।

২.গরু অধীক পরিমানে লিভার কৃমিতে আক্রান্ত হলে ও অপুষ্টি বা রক্ত সল্পতা থাকলে এই রোগ জটিল আকার ধারণ করে।

লক্ষণ:

গরুর গলাফুলা রোগের লক্ষণ সমূহকে দুইটা ভাগে দেখানো যায়।

১.অতি তীব্র ও

২. তীব্র এ দুই প্রকৃতির হতে পারে। বোঝার সুবিধার্থে আমরা অতি তীব্র ও তীব্র এ দুই ধরনের লক্ষণ আলাদা আলাদা ভাবে জানবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।

অতি তীব্র সংক্রমণের লক্ষণ:

১.হঠাৎ শরীরের তাপমাত্রা ১০৬-১০৭ ডিগ্রি ফারেনহাইট উঠে যায়।

২.গবাদিপশুর মুখ ও নাক দিয়ে তরল পদার্থ বের হয়।

৩.পশু খাওয়া বন্ধ করে দেয়।

৪.অবসাদগ্রস্থ হয়ে পড়ে ও

৫.লক্ষণ প্রকাশের ২৪ ঘন্টার মধ্যে গরু মারা যায়।

তীব্র সংক্রমণের লক্ষণ:

১.এ সময় পশুর এডিমা দেখা দেয় যা প্রথমে গলার নিচে, পরে চোয়াল, তলপেট এবং নাক, মুখ, মাথা ও কানের অংশে বিসতৃত হয়।

২.গলায় স্ফীতি থাকলে গলার ভেতর ঘড় ঘড় শব্দ করে।

৩.প্রদাহযুক্ত ফোলা স্থানে ব্যথা থাকে এবং হাত দিলে গরম ও শক্ত অনুভূত হয়।

৪.ফোলা স্তনে সূঁচ দিয়ে ছিদ্র করলে উক্ত স্থান হতে হলুদ বর্ণের তরল পদার্থ বের হতে দেখা যায়।

৫.কোনো কোনো ক্ষেত্রে জিহব্বা বের হয়ে আস।

৬.লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়।

৭.অনেক সময় প্রাণীর কাশি হয় এবং চোখে পিচুটি ময়লা দেখা যায়।

৮. নাক দিয়ে ঘন সাদা শ্লেষ্মা পড়তে দেখা যায়।

৯.লক্ষণ প্রকাশ পাওয়ার ৪৮ ঘন্টার মধ্যে শ্বাসরুদ্ধ হয়ে আক্রান্ত পশু মারা যায়।

গলাফুলা রোগ প্রতিরোধের উপায়:

এ রোগ থেকে সম্পূর্ণ নিরাপদ থাকা প্রায় অসম্ভব বলা যায় কারণ এ রোগের জীবাণু স্পশুর দেহে সব সময় বিরাজ করে। তবে কিছু ব্যবস্থা গ্রহণের মাধ্যমে এ রোগ থেকে মুক্ত থাকা যায়।

১.আবহাওয়া পরিবর্তনের সময় বিশেষ করে বর্ষা কালে ও বর্ষার শেষে গরুর প্রতি বাড়তি পরিচর্যার ব্যবস্থা করতে হবে।

২.সুস্থ গরুকে টিকা প্রোদানের ব্যবস্থা গ্রকণ করতে হবে।

৩.রোগে আক্রান্ত হলে রোগাক্রান্ত গরুকে সুস্থ গরু থেকে আলাদা করতে হবে।

৪.আসেপাশে এই রোগ দেখা দিলে গরু এবং খামারির চলাচল নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে।

৫.গরুকে সময় মত এবং নিয়মিত কুমিনাশক ঔষধ প্রোয়গ করতে হবে।

7৬.গরুকে সুস্থ রাখার জন্য খাদ্যের পুষ্টি মান ঠিক রেখে খাবার খেতে দিতে হবে এবং খাদ্য অভাবে রাখা যাবে না।

৭.টিকা বা ভ্যাকসিন প্রয়োগের মাধ্যমে।

প্রাথমিক চিকিৎসা:

পশু আক্রান্ত হলে পশুর চিকিৎসায় কোন প্রকার বিলম্ব করা যাবে না। আর তাই রোগের লক্ষণ দেখা দেয়ার সাথে সাথে চিকিৎসার ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। গরুর গলাফুলা রোগের চিকিৎসায় সালফোনামাইড গ্রুপ এর ঔষধ যেমন- সালফাডিমিডিন,ট্রাইমিথোপ্রিম-সালফামেথাক্সাসোল কম্বিনেশন,অক্সিটেট্রাসাইক্লিন, পেনিসিলিন ও ক্লোরামফেনিকল জাতীয় ঔষধ বেশ কার্যকর।

Ampicillin, Tetracycline, Erythromycin, Sulphonamide জাতীয় ইনজেকশন মাংসে দিয়ে ভাল ফল পাওয়া যায়। Sulphadimidin ঔষধ শীরায় প্রয়োগ করে দ্রুত ফল পাওয়া যায়। আমাদের দেশে এ চিকিত্সাটা বেশি ব্যবহূত হয়। 

অর্থনৈতিক গুরুত্ব:

গলাফুলা রোগের যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব আছে বিশেষত গলাফুলা রোগে শুধু গবাদিপশুর মৃত্যুই ঘটে না, সাথে সাথে বেশ কিছু ক্ষতিও হয়। যেমন -

মাংস, দুধ, উৎপাদন কমে যায় পশুর প্রজনন ক্ষমতা বিঘ্নিত হওয়া, চিকিংসা খরচ বৃদ্ধি পায়।এতে করে খামারির লোকসান হয়। 

সবাই ভালো থাকুন,আর আপনার খামারের সমস্ত পশু সুস্থ থাকুক এই কামনা করি। সাথেই থাকুন ।

আরও পড়ুন —-





Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.