গরুর শীতকালীন পরিচর্যা কি ভাবে করবেন?

 


আবহাওয়া পরিবর্তনের সাথে প্রাণীর অভ্যন্তরীণ বিপাকীয় এবং অভ্যাসগত বেশ কিছু পরিবর্তন লক্ষ করা যায়। অভ্যন্তরীণ বিপাকীয় এবং অভ্যাসগত পরিবর্তনের ফলে গরুর স্বাস্থ্যে এবং উৎপাদনে ব্যাপক প্রভাব পড়ে।দেশি জাতের সাথে সংকরায়ণের ফলে আমাদের দেশের গরুর শীত সহ্য ক্ষমতা তুলনামূলক অনেক কমে যায়। তাই শীতকালে গরুর স্বাস্থ্যের দিকে কিছু বিষয়ে বাড়তি মনোযোগ জরুরি।যেমন :

খাদ্য অভ্যাসঃ

শীতকালে প্রাণীর শরীরে হজম ক্ষমতা বৃদ্ধি পায়, ফলে গাভীর দুধের উৎপাদন বৃদ্ধি পায়।বাড়তি উৎপাদনের জন্য গরুর বাড়তি খাবারের প্রয়োজন।বাড়তি খাবার না দিলে গরু দুর্বল হয় এবং দুধ উৎপাদন কমিয়ে দেয়।শীতকালে গরুর শরীরে কোষ্ঠ্যকাঠিন্যের প্রবণতা দেখা যায়। কোষ্ঠকাঠিন্য থেকে থেকে রক্ষা করতে গরুকে অধিক আশযুক্ত খাবার দেয়া আবশ্যক।আশযুক্ত খাবার যেমন -ঘাস খড় ।

পানি এবং খাবারঃ

প্রাণীর শরীরে শরীরবৃত্তীয় কাজে কম পানির দরকার হয়।পানি অধিক ঠান্ডা হওয়ায় শীতকালে সকল প্রাণী পানি পানের পরিমান কমিয়ে দেয়। এই সমস্যা সমাধানের জন্য গরুকে ট্যাংকে সংরক্ষিত বাসি ঠান্ডা পানি না দিয়ে গরুর জন্য বিশুদ্ধ ফ্রেশ পানির ব্যবস্থা করতে হবে।সম্ভব হলে কুসুম গরম পানির ব্যবস্থা করতে হবে।গরুকে যদি পানির সঙ্গে মিশিয়ে খাবার দেওয়া হয় বিশেষ করে বিকালবেলা তাহলে হালকা গরম পানি দিলে ভালো হয়।শীতে গবাদিপশুর সাভাবিক সময়ের চেয়ে বেশি তাপমাত্রার প্রয়োজন হয় তাই শরীরের ক্যালরিও বেশি খরচ হয়।তাই এ সময় অনানো সময়ের চেয়ে খাবারও বেশি দিতে হয়।

বাসস্থানঃ

শীতকাল আসার আগেই গরুর বাসস্থানের প্রতি কিছু পরিকল্পনা রাখার দরকার।শীতকালে ঠান্ডা বাতাস যেন সরাসরি গরুর শরীরে না লাগে সে দিকে নজর রাখতে হবে।শীতকালে গরু নিউমোনিয়া সহ ঠাণ্ডাজনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হয় ।এইজন্য গরুর বাসস্থানে যেনো ঠান্ডা বাতাস প্রবেশে না করে সে দিকে খেয়াল রাখতে হবে।খামারের চারদিকে দেওয়াল না থাকলে বা ফাঁকা থাকলে চট দিয়ে নয়তো মোটা কাপড় দিয়ে ঢেকে দিতে হবে যাতে বাহিরের ঠান্ডা হাওয়া ভিতরে প্রবেশ না করে। প্রয়োজনে গরুকে পুরাতন কম্বল বা পাটের বস্তা এই জাতীয় জিনিস দিয়ে রাতে জড়িয়ে রাখতে হবে।।শীত অতিরক্ত বেশি হলে খামারে তাপমাত্রা বাড়াতে হবে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে।

পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতাঃ

অনেক সময় গরুর গোসল বা সেড পরিস্কার করার জন্য যে পানি ব্যাবহার করা হয় তা সেডের ভিতর কোনো কোনো জায়গায় জমে থাকে।গরুর শেডে যেন পানি জমে না থাকে অথবা গরুর প্রস্রাব জমে না থাকে সে দিকে নজর দিতে হবে।ফ্লোর যেন অধিক শুষ্ক থাকে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি দিতে হবে।গরু রাবার মেটে শুলে ঠান্ডা থেকে কিছুটা রক্ষা পাবে।অথবা মেঝেতে খড় বিছিয়ে দিতে হবে।খামার সবসময় পরিস্কার রাখুন, যাতে করে প্রসাব পায়খানা গরুর শরীরে না মাখে ।যদি গরুর শরীর পরিষ্কার থাকে তাহলে ঠান্ডা বেশি থাকলেও প্রতিদিন গরুকে গোসল করানোর প্রয়োজন হবে না।

রোগ ব্যাধিঃ

শীতে গরুর ক্ষুরা রোগ,গোলা ফোলা,তড়কা,বাদল,নিউমোনিয়া ও কাশি সহ ঠান্ডা জনিত বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। তাই এই সকল রোগের বিষয়ে বিশেষ সচেতন থাকতে হবে। এ জন্য শীত আসবার আগে গরুর ভ্যাকসিন করাতে হবে।শীতে গবাদিপশুর পাতা কৃমির আক্রমণ দেখা যায় আর এ কারণে গরুর দুর্বল হয় এবং বিভিন্ন রোগ দেখা দেয় এ জন্য গবাদিপশুকে কৃমির ঔষধ সেবন করতে হবে।শীতের আগে কুয়াশা পড়ে তাই খেয়াল রাখতে হবে গরু যেনো কুয়াশায় না ভিজে, এ থেকে নিউমোনিয়া,কাশি বা শীতকালীন রোগ দেখা দিতে পারে।ঠান্ডা জনিত কোনো সমস্যার লক্ষণ দেখা দিলে দ্রুত অভিজ্ঞ পশু চিকিৎসক দ্বারা চিকিৎসা করতে হবে অথবা নিকটস্থ পশু হসপিটাল নিতে হবে। 

বাছুর এবং দুর্বল গাভীঃ

ঠান্ডায় সবচে বেশি আক্রান্ত হয় খামারের নবজাতক বাছুর। যেহেতু বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা একেবারেই কম থাকে তাই ঠাণ্ডাজনিত রোগে বাছুর সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত হয়। তাই শীতকালে অবশ্যই বাছুরকে গরম কাপড় বা চট দিয়ে জড়িয়ে রাখতে হবে।বাছুরকে গরম এবং শুষ্ক জায়গা রাখতে হবে। প্রযোজন হলে বৈদ্যুতিক বাল্ব ব্যবহারের মাধ্যমে বাছুরের থাকবার জায়গা গরম রাখতে হবে। ।খামারে কোন দুর্বল গাভী থাকলে ঐ গাভীর দিকে শীতে সু নজর রাখতে হবে।কোনো প্রকার ঠান্ডা জনিত সমস্যা দেখা দিলে দ্রুত ডাক্তারের পরামর্শ নিতে হবে।খামারের প্রত্যেকটি পশুকে সুস্থ সবল রাখবার জন্য আপনার সচেতনতা সবচে বেশি জরুরি দরকার।

আরও পড়ুন –

গরুর খামার ও উন্নত জাতের গাভী সম্পর্কে কিছু তথ্য।

গরুর রোগ পরিচিতি।

ডেইরী খামার সম্পর্কে কিছু আলোচনা।


















Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.