গবাদি পশুর পরজীবী কি?

পরজীবী কি?

পরজীবী হল একটি জীব যা (এক্টোপ্যারাসাইট) বা (এন্ডোপ্যারাসাইট) এর মধ্যে বাস করে যা হোস্ট নামে পরিচিত।গবাদি পশুর পরজীবী রোগ স্বাস্থ্য, প্রজনন, বৃদ্ধি এবং উৎপাদনশীলতা নষ্ট করে।গুরুতর ক্ষেত্রে, পরজীবীর কারণে মৃত্যু হতে পারে।

পরজীবী দুই ধরনের -

১বহিঃপরজীবী এবং

২. অন্তঃপরজীবী।

আসুন গবাদি পশুর বহিঃপরজীবী এবং অন্তঃপরজীবীগুলির বিশেষত্ব কী জেনে নিই।যে পরজীবী অন্য প্রাণির শরীরের বাহ্যিক অংশে বসবাস করে তাকে বহিঃ পরজীবী বলে। যেমনঃগবাদি পশুদের মধ্যে পরজীবী(একটোপ্যারাসাইট)গুলি হল মাছি,আঠালি, উকুন,মাইটস, কেডস, খোসপাঁচড়া এবং টিক্স।


মাছি :

গৃহপালিত পশুকে বিভিন্ন ধরনের মাছি আক্রমণ করে মাছি পশুর দেহে কামড় দিয়ে রক্ত চুষে খায়।কিছু মাছি আছে পশুর দেহের ক্ষতে ডিম পাড়ে এবংডিম থেকে লার্ভা হয়, ফলে ক্ষতে পচন ধরে, ক্ষত শুকায় না।ক্ষতে বিভিন্ন রোগজীবাণু সংক্রমিত হয়ে রোগ সৃষ্টি হয়।মাছি দেহে চুলকানির সৃষ্টি করে।চুলকানোর জন্য দেহ শক্ত কিছুতে ঘষে বা জিহবা দিয়ে চেটে ঘায়ের সৃষ্টি করে।

আঠালি:

প্রায় সকল গবাদি পশু আঠালি দ্বারা আক্রান্ত হয়।আঠালি পশুর ত্বকে বাস করে, রক্ত চুষে খায়।পশুর শরীরেবিভিন্ন জীবাণু সংক্রমণ করতে সহায়তা করে।

অধিক আক্রমণে পশুর ত্বকে ক্ষত সৃষ্টি করে।

উকুন:

গৃহপালিত পশুতে উকুন আক্রমণকরলে পশুর দেহ খুব চুলকায়। ফলে পশু শক্ত জিনিসের সাথে শরীর ঘষে ক্ষতের সৃষ্টি করে,উকুন সাধারণত কুঁজের উপর ও লেজের গোড়ার চারদিকে বসবাস করে।

রক্ত চোষা উকুন পশুর ঘাড়ের দুই পাশে, বক্ষস্থলে, উরুর ভেতরে, লেজের গোড়ায়, মাথায়, নাক, চোখ ও কানের চারপাশে জমাট বেঁধে আটকিয়ে থাকে।

মাইটস:

মাইটস পশুর দেহে সংক্রামক চর্মরোগের সৃষ্টি করে।

কেডস:

ছাগল ও ভেড়ায় এ জাতীয় পরজীবী আক্রমণ করে থাকে।এরা আঠালির মত পশুর রক্ত চুষে খায়।

কীভাবে বুঝবো গবাদিপশু বহিঃ পরজীবীতে আক্রান্ত হয়েছে?

১.দেহত্বকের লোমঃ পশুর শরীরের দেহত্বকের লোম যদি উস্কো খুস্কো হয়ে যায়, লোম ঝরে যায়।

২.ত্বক চুলকানোঃ এ রোগের আরেকটি বৈচিষ্ট্য প্রাণির শরীর অনেক চুলকাবে। প্রাণির ত্বকে প্রচন্ড চুলকানি হবার কারণে পশু শক্ত বস্তুর সাথে শরীর ঘষে। ফলে অনেক সময় চামড়াই ক্ষত দেখা যায়

৩.অস্থিরতাঃ আক্রান্ত প্রাণির মধ্যে এক ধরণের ছটফটানি কাজ করে, এক জায়গায় স্থির হয়ে থাকতে পারে না।

৪. বৃদ্ধি হ্রাসঃ এক পর্যায়ে প্রাণির খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয় এবং প্রাণির শারীরিক বৃদ্ধিতে বাঁধা তৈরি হয় ফলে পশুর উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়। 

৫.রক্ত স্বল্পতাঃ বহিঃ পরজীবি গুলো প্রাণির শরীর থেকে রক্ত খেয়ে বেঁচে থাকে। ফলে প্রাণির শরীরে রক্ত স্বল্পতা দেখা দেয় এবং পশুর শরীরে বিভিন্ন পুষ্টিসল্পতা দেখা যায় ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কমে যায়।

৬.ক্ষুধামন্দাঃ আক্রান্ত প্রাণির খাবারের প্রতি অনীহা দেখা দেয়।

আক্রান্ত হবার কারণ কি?

প্রাণির শরীর নোংরা বা উসকোখুসকো থাকলে, আর্দ্রতা কমে গেলে বা ব্যাকটেরিয়ার আক্রমণ ইত্যাদি বিভিন্ন কারণে বহিঃ পরজীবি শরীরে বাসা বাধতে পারে।

প্রতিরোধ ও চিকিৎসা:

১. নিয়মিত দেহ ঘষে গোসল করাতে হবে।

২. প্রতিদিন দেহ চিরুনি দিয়ে ব্রাশ করে দিতে হবে।

৩. পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন লালন পালন করতে হবে।

৪. নেগভুন,এসানটল,নিওসিডোল দেহে প্রয়োগ করতে হবে।

৫. ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

১.স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।

২.নিয়মিত গরুকে গোসল করানো।

৩.বাসস্থান সর্বদা পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, গোয়ালঘরে পর্যাপ্ত আলো-বাতাস সরবরাহ ইত্যাদি বিষয়ে লক্ষ্য রাখতে হবে। 

৪.কীটনাশক জাতীয় ঔষধ ব্যবহার করলে ব্যাবহারের পূর্বে ও পরে পশুকে কিছু খাওয়ানো যাবে না। 

৫.নেগভুন,এসানটল,নিওসিডোল দেহে প্রয়োগ করতে হবে।

৫. ঘরের মেঝে জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৫.ঔষধ ব্যবহারের পর বেশিক্ষণ পশুকে এ অবস্থায় রাখা যাবে না। আনুমানিক ২ ঘন্টা পর ঠান্ডা পানি দিয়ে সমস্ত শরীর ধুয়ে দিতে হবে। 

সব পরজীবীর জন্য এ ধরনের ব্যাবস্থা নেওয়া যেতে পারে।

অন্তঃপরজীবী:

এরা পোষক দেহের ভিতরে অবস্থান করে। আমাদের দেশে প্রায় শতকরা ৮০ ভাগ গবাদিপশু কৃমিতে আক্রান্ত হয়। অন্তঃপরজীবীকে বিভিন্ন আকৃতির হয়,এবং আকৃতি ভেদে এদেরকে বিভিন্ন ভাগে ভাগ করা যায়।যেমন -

১.গোলকৃমি, 

২.পাতাকৃমি ও

৩. ফিতাকৃমির 

ছাগল গরু তথা সকল গবাদিপশুর গোলকৃমি, পাতাকৃমি ও ফিতাকৃমির আবাস স্থল হলো-

গোলকৃমি- পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীতে।

পাতা কৃমি-কলিজাতে যা সাধারণত কলিজা কৃমি নামে পরিচিত।

ফিতা কৃমি- পাকস্থলী ও অন্ত্রনালীতে বসবাস করে।

আরও পড়ুন -

পরবর্তী পোষ্ট অন্তঃপরজীবী সম্পর্কে ইনশাল্লাহ।


Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.