বাছুরের নাভিফোলা রোগ কারণ, লক্ষনও পতিকার ও চিকিৎসা

দুগ্ধখামারের বাছুরের যত্ন একটু আলাদাভাবে নিতে হয়। কারণ এই বয়সী বাছুরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা অনেক কম থাকে। নবজাতক বাছুরের সাধারণত যে রোগ গুলিবেশি লক্ষ করা যায় তার মধ্যে নাভিফোলা বা নাভিপচা অন্যতম।নবজাত বাছুরের জন্য নাভী পাকা রোগ Navel ill একটি মারাত্মক রোগ যা কিনা বাছুরের মরণ পর্যন্ত নিতে পারে।তাই আসুন এ রোগ সম্পর্কে কিছু জানবার এবং জানার চেষ্টা করি।



নাভিফোলা বা নাভিপচা কি?

এটি Staphylococcus নামক এক প্রকার ব্যাকটেরিয়া দ্বারা এ রোগ হয়ে থাকে।সাধারণত নবজাতক বাছুরের নাভি এবং নাভির চারপাশের অংশের প্রদাহ ও সংক্রমণকেই নাভির রোগ (Navel ill) বলে। 

বাছুর জন্মের ৪-৬ দিনের মধ্যে এ রোগের লক্ষন প্রকাশ পায় দ্রুত রোগ শনাক্ত ও চিকিৎসা না করলে বাছুর মারাও যেতে পারে। 

বাছুরের নাভি বা আমবিলিক্যাল কর্ড (নাড়ি) গঠিত হয় এমনিয়োটিক মেমব্রেন, আমবিলিক্যাল শিরা, আমবিলিক্যাল ধমনী ও ইউরেকাস দ্বারা। বাছুর গাভীর জরায়ুতে থাকা অবস্থায় এই নাড়ির মাধ্যমেই বাছুরের শরীরে পুষ্টি সরবরাহ হয়। জন্মের সময় নাভি বা আমবিলিক্যাল কর্ড ছিঁড়ে যায়। এ সময়ে আমবিলিক্যাল শিরা ও ইউরেকাস বন্ধ হয়ে যায় কিন্তু বাকি অন্যান্য অংশগুলো উন্মুক্ত থাকার কারণে পারিপার্শ্বিকের সংস্পর্শে আসে। এর ফলে নাভিতে নানা জীবাণুর সংক্রমণ ঘটতে পারে। এ সংক্রমণ মূত্রথলি পর্যন্ত সম্প্রসারিত হয়ে মূত্রথলির প্রদাহ হতে পারে।

কারণ:

বেশ কিছু কারণে এ রোগ দেখা দিতে পারে।যেমন -

১.বাছুরের জন্মের পর গাভীর জিহ্বা দ্বারা বাছুরের নাভী চাটার কারনে হতে পারে।

২.অনেক সময় কুকুর বা কাক বা অন্য কোনো প্রাণীর দ্বারা বাছুরের নাভীতে কামড় বা ঠোকর দিয়ে ছিড়ে দিলে।

৩. সব সময় বাছুরের নাভী ভিজা বা স্যাতসেতে অস্বাস্থ্যকর জায়গায় থাকলে।

৪.বাছুর জন্ম নেওয়ার পর নাড়ী নতুন ব্লেড দিয়ে না কেটে কোনো পুরাতন ব্লেড দিয়ে বা অন্য পুরাতন কিছু দিয়ে কাঁটা

৫. নাভী কাটার পর জীবাণু নাশক ব্যাবহার না করার কারণেও দেখা দিতে পারে।

লক্ষন:

সাধারণত বাছুর জন্মের ২থেকে ৪ সপ্তাহের মধ্যে এ রোগের লক্ষণ দেখা দেয়।

১.তাপমাত্রা সভাবিকের থেকে বেড়ে ১০৫-১০৬ ডিগ্রী ফাঃ পর্যন্ত হতে পারে।

২.নাভী ফোলা, ভেজা ভেজা, গরম ও শক্ত অনুভুত হয়।

৩.চাপ দিলে রক্ত মেশানো তরল পদার্থ বের হয়

৪.পেকে গেলে পুঁজ বের হবে এবং হাত দিয়ে চাপ দিলে ব্যাথা পাবে।

৫.অক্রান্ত বাছুর নিস্তেজ ও দুর্বল হয়ে পড়ে।

৬.নাভীতে ক্ষত থাকার কারনে মাছি ডিম দেয় ফলে নাভীতে পোকা পড়তে দেখা যায়।

৬. বাছুর বার বার আক্রান্ত নাভী চাটে।

বি: দ:অতি তীব্র হলে বাছুর মারা যেতে পারে।

প্রতিরোধ:

১.গাভী যেন বাছুরের নাভী চাটতে না পারে সেদিকে খেয়াল রাখুন।

২.বাছুর জন্মের পর যতদুর সম্ভব শুকনো ও পরিষ্কার স্থানে রাখা সম্ভব হলে চট বা খড় বিছিয়ে দিয়া।

৩.বাছুর জন্মের পর কোনো ভাবে নাভী তে ক্ষত না হয় সেদিকে খেয়াল রাখা।

৪.নাভী কাঁটার সময় জীবাণুমুক্ত ব্লেড ব্যাবহার করা।

৫.নাভী কাঁটার পর জীবাণুনাশক ব্যাবহার করা।

চিকিৎসা:

১. গাভীকে বাছুরের নাভি চাটা থেকে বিরত রাখতে হবে।

২.নাভি পেকে গেলে ব্লেড বা ধারালো কোনো অস্ত্র দ্বারা কেটে পুঁজ বের করে দিতে হবে।

৩. ক্ষত স্থান দিনে দুই থেকে তিন বার জীবাণুনাশক দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৪.নাভির ভিতর পোকা হলে পটাশ বা হাইড্রোজেন পারঅক্সাইড দিয়ে পরিষ্কার করতে হবে।

৩. চিমটা দিয়ে বা অন্য কোনো পরিষ্কার কিছু দিয়ে পোকা বের করতে হবে।

৪. নাপথলিন গুড়া করে ক্ষত স্থানে পরপর ২-৩ বার লাগাতে হবে

৪.বাছুরকে ব্যাথা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

৫.শক্তিশালী এন্টিবায়টিক প্রয়োগ করতে হবে।

৬.ইনজেকশন করবার আগে এন্টিহিস্টামিন দিতে হবে।

৭..গজ ডুকাতে হবে।

বাছুরকে ব্যাথা নাশক ঔষধ প্রয়োগ করতে হবে।

৮.প্রাথমিক অবস্থার নাভি পাকা রোগের জন্য টেট্রাসাইক্লিন ইনজেকশন যেমন Renamycin, Tetracycline এর যে কোনো একটি ইনজেকশন দিতে পারেন। এছাড়াও পেনিসিলিন গ্রুপের ঔষধ দিয়া যেতে পারে

ভালো ভাবে চিকিৎসা করলে ৫-৭ দিন দিলে নাভি ফোলা রোগ ভালো হয়।

বাছুরকে সবসময় যত্নে রাখুন আর আপনার খামারের বাছুরকে সুস্তু রখুন।


আমার পোস্ট যদি ভালো লাগে আমাকে উৎসাহিত করবেন আমি বিভিন্ন রোগ সম্পর্কে ডক্টর দের সাথে পরামর্শ করে জানবার চেষ্টা করবো ইনশাআল্লাহ।


আরও পড়ুন –



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.