গরু মোটাতাজাকরণ প্রক্রিয়া।

 


গরু পালন সবচেয়ে বেশি লাভজনক হবে যদি আপনি সঠিক নিয়মে মোটাতাজা করতে জানেন।বাংলাদেশ মুসলিম প্রধান দেশ সে হিসাবে দ্বিতীয় প্রধান ধর্মীয় উৎসব কুরবানীর ঈদ। আর কুরবানী ঈদ মানেই বিপুল পরিমান গরুর চাহিদা ।তাছাড়া মানুষের পছন্দের তালিকায় গরুর মাংস এক নম্বরে।

সারা বিশ্বেই কিন্তু জনপ্রিয়তার দিক থেকে গরুর মাংস এক নম্বরে। সুতরাং দেশের পাশাপাশি গরুর মাংস রপ্তানি করারও সুযোগ আছে।

মোটাতাজাকরণ প্রকল্প দুগ্ধ খামারের চেয়ে কম ঝুঁকিপূর্ণ । কারণ গাভীর যত্ন, চিকিৎসা ও খাবারের পেছনে বিপুল অর্থ ব্যয় হয়। আবার দুধের বাজার গো খাদ্যের তুলনায় অনেক কম।আমাদের দেশে বেশিরভাগ ভাগ খামারি ছোট ও মাঝারি।খামরিকে দুধের দৈনিক বাজারের ওপর নির্ভরশীল থাকতে হয়। ফলে এসব খামারির এক একটা দিন শুরু হয়ই অনিশ্চয়তা নিয়ে। 

কিন্তু মোটাতাজাকরণ খামারে সে ঝামেলা নেই। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা করে যারা ধীরে ধীরে এগোতে চান তাদের জন্য লাভের উদ্যোগ হতে পারে গরু মোটাতাজাকরণ খামার। 

আর এ ধরনের খামার থেকে একসাথে বড় অংকের টাকা হাতে আসে। ফলে চাইলে খুব দ্রুতই বড় উদ্যোগ নেওয়ার সামর্থ্যও তৈরি হয়।

তবে পশু মোটাতাজা করণের জন্য বিশেষ কিছু বিষয়ের প্রতি লক্ষ্য রাখতে হবে।বিষয়গুলি সংক্ষেপে আলোচনা করার চেষ্টা করবো -

১.পশু নির্বাচন।

২.পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা

৩. কৃমি বা পরজীবী মুক্ত করা।

৪.টিকা প্রদান ও

৫.বাজারজাতকরণ।

∆ পশু নির্বাচন:

বয়স:

গরু মোটাতাজাকরণের জন্য সবচেয়ে গুরত্বপূর্ণ বিষয় হলো গরু নির্বাচন করা। গরু ক্রয়ের সময় বয়স ও শারীরিক গঠনের দিকে খেয়াল রাখতে হবে। মোটাতাজা করার জন্য সাধারণত ২ থেকে ৫ বছর বয়সী গরু কেনা যেতে পারে, তবে ৩ বছর বয়সী গরু হলে ভালো হয়।গর্ভধারণে অক্ষম গাভী অথবা উঠতি বয়সের এঁড়ে বাছুরও মোটাতাজা করার জন্য বেছে নেওয়া যেতে পারে।

∆ শরীরের গঠন:

মোটাতাজাকরণে ব্যবহৃত গরুর দৈহিক গঠন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এজন্য যে বিষয়ের দিকে খেয়াল করতে হবে তা হলো:

১.দেহ বর্গাকার কি না 

২.গায়ের চামড়া ঢিলা হতে হবে।

৩.শরীরের হাড়গুলো আনুপাতিকহারে মোটা, মাথাটা চওড়া, ঘাড় চওড়া এবং খাটো।

৪.পাগুলো খাটো এবং সোজাসুজিভাবে শরীরের সাথে যুক্ত।

৫.পিছনের অংশ ও পিঠ চওড়া এবং লোম গুলি খাটো

৬.গরু অপুষ্ট ও দুর্বল কিন্তু রোগামুক্ত।

৭.গায়ের রঙ লাল বা কালো হলে ভালো হয়,কারন এ দুটি রঙ বেশ আকর্ষণীয়।


∆পরজীবী মুক্ত করা:

গবাদিপশুর দুই ধরনের পরজীবী দিয়ে আক্রান্ত হতে পারে।বহিঃপরজীবী এবং অভ্যন্তরীণ পরজীবী।বহিঃপরজীবী বলতে উকুন, আঠালি, সিঁদুর পোকা ইত্যাদিকে বুঝায়।আর অভ্যন্তরীণ পরজীবী বলতে বুঝায় গোল কৃমি,কলিজা বা পাতা কৃমি পশুচিকিৎসকের নির্দেশনা মতো কৃমিনাশক ওষুধ ব্যবহার করতে হবে। গরু সংগ্রহের পরপরই পালের সব গরুকে একসাথে কৃমিমুক্ত করতে হবে


দৈহিক ওজন হিসাব করে কৃমি নাশক ব্যাবহার করতে হবে বাজারে বিভিন্ন কৃমিনাশক ঔষধ পাওয়া যায় যেমন - ইনডেক্স বা এন্টিওয়ার্ম টাবলেট ,Ranadex Vet ব্যবহার করা যেতে পারে।

∆ গোলকৃমি

গোলকৃমি মুক্ত করতে নিচের যে কোনো একটি ওষুধ ব্যবহার করা যায়

০১.মেনাফেং পাউডার = ১ প্যাকেট ১টি গরুর জন্য।

০২.নেমাফেক্স বড়ি = ৩টি বড়ি একটি পূর্ণ বয়স্ক গরুর জন্য ও২টি বড়ি মাঝারি ও ছোট বাছুরের জন্য।

০৩.কোপেন পাউডার = ১টি প্যাকেট একটি গরুর জন্য।

∆ কলিজা বা পাতা কৃমি:-

চামড়ার নিচে টোডাক্স ইনজেকশন করতে হবে। মাত্রা সাধারণভাবে ২/৩ সিসি, প্রাপ্তবয়স্ক গরুর জন্য। মোটাতাজা করতে হলে ২ সিসি পরিমান ইনজেকশন করতে হয়।

∆ টিকা দেওয়া:

আগে থেকে টিকা না দেওয়া থাকলে খামারে আনার পরপরই সবগুলো গরুকে তড়কা, বাদলা এবং ক্ষুরা রোগের টিকা দিতে হবে। এ ব্যাপারে নিকটস্থ পশু হাসপাতলে যোগাযোগ করতে হবে।

∆ আবাসন ব্যবস্থাপনা:

আমদের দেশের বেশির ভাগ খামারি ২/৩ টি পশু মোটাতাজা করে থাকে, যার জন্য সাধারণত আধুনিক সেড করার প্রয়োজন পড়ে না। তবে যে ধরনের ঘরেই গরু রাখা হোক ঘরের মধ্যে পর্যন্ত আলো এবং বাতাস প্রবেশ করতে পারে সে দিকে খেয়াল রাখা দরকার।ঘরের মল- মূত্র ও অন্যান্য আবর্জনা যাতে সহজেই পরিষ্কার করা যায় সে দিকে খেয়াল রেখে ঘরে তৈরি করতে হবে।

 ∆ পুষ্টি ও খাদ্য ব্যবস্থাপনা:

গরু মোটতাজাকরণে দুই ধরনের খাদ্যের দরকার হয়।

১.আঁশ জাতীয়: শুধু খড়, ইউএমএস, সবুজ ঘাস ইত্যাদি।

২.দানাদার: খৈল, ভুসি, চালের কুঁড়া, খুদ, শুঁটকি মাছ, ঝিনুকের গুঁড়া, লবণ ইত্যাদি।

আরও পড়ুন - -



Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.