গরুর কলিজা কৃমি থেকে বাঁচার ১০ টি উপায়।

  

 কলিজা কৃমি(Liver fluke) কি?

গবাদিপশুর কলিজা কৃমি এক প্রকার পরজীবী রোগ। এর অন্যান্য নাম হলো ফ্যাসিওলিয়াসিস, কলিজা চাটুয়া বা কলিজা পঁচা রোগ।লিভার ফ্লুক গবাদি পশু, ভেড়া এবং ছাগলের পাশাপাশি অন্যান্য প্রাণী প্রজাতিকে সংক্রামিত করতে পারে।এটি একটি জুনোটিক রোগ যার মানে মানুষও সংক্রমিত হতে পারে।

ফ্যাসিওলা প্রজাতির পাতা কৃমি দ্বারা সৃষ্ট পশুর রোগকে ফ্যাসিওলিয়াসিস বা কলিজা কৃমি রোগ বলে।

কলিজা কৃমির জীবনচক্র:


লিভার ফ্লুকের জীবনচক্রের জন্য দুটি হোস্টের প্রয়োজন হয়।হোস্টের মধ্যে একটি মিঠা পানির শামুক এবং নির্দিষ্ট হোস্ট গরু, ভেড়া, ছাগল,ঘোড়া ইত্যাদি।শামুকের উপস্থিত না থাকলে লিভার ফ্লুক লাইফসাইকেল সম্পূর্ণ হয় না কারণ লার্ভা শামুকের মধ্যে বিকশিত হয়। এবং বিকশিত হতে ২-৩ মাস সময় লাগে।শামুক থেকে সিস্ট তৈরি করার আগে যা গবাদি পশুরা খেয়ে ফেলে। যেটি পিত্ত নালীতে যাওয়ার পথে ফ্লুক বা গর্ত তৈরি করে।

কলিজা কৃমির সম্ভাবনাময় স্থান:

যেসব স্থান থেকে লিভার ফ্লুক হওয়ার সম্ভাবনা থাকে, যেখানে শামুকের জন্য উপযুক্ত বাসস্থান যেমন ঝর্ণা, জলাভূমি, জলের ধারা, জলের খাঁজ এবং সেচযুক্ত চারণভূমি।

সনাক্তকরণ এবং রোগ নির্ণয়:

কলিজা কৃমি বা লিভার ফ্লুক তীব্র এবং দীর্ঘস্থায়ী রোগ হতে পারে।তীব্র রোগ ভেড়ার মধ্যে সবচেয়ে বেশি দেখা যায়। আমাদের দেশে সাধারণত গ্রীষ্মের শেষ থেকে শরতের শেষ পর্যন্ত এ রোগের সংক্রমন দেখা যায়।দীর্ঘস্থায়ী ভাবে গবাদি পশুদের মধ্যে একেবারেই সাধারণ একটি রোগ।কলিজা কৃমি বা লিভার ফ্লুক যে কোনো সময় হতে পারে।তীব্র রোগটি তুলনামূলকভাবে অল্প সময়ের মধ্যে প্রচুর পরিমাণে ফ্লুক সিস্ট গ্রহণ করে। এর ফলে যকৃতের যথেষ্ট পরিমাণে ক্ষতি হয়।যায় ফলে কিছু লক্ষণ দেখা যায়।যেমন:

  • ওজন হ্রাস এবং সাভাবিক কর্যোক্রম না থাকার ফলে উৎপাদন হ্রাস পায়।
  • রক্তশূন্যতা দেখা যায়, যার কারণে চোখের চারপাশে ফ্যাকাশে দেখা যায়। মাড়ি এবং ঝিল্লির মাধ্যমেও ফ্যাকাশে দেখা যায়। 
  • জন্ডিসের কারণে মাড়ি এবং চোখ হলুদ বর্ণ ধারণ করতে পারে।
  • পেটে ব্যথার লক্ষণও হতে পারে।
  • যকৃতে কৃমির উপস্থিতির কারণে রক্তে প্রোটিনের অভাব ঘটে। ফলে বিশেষ করে চোয়ালের নিচে চামড়ায় ও বুকের বেড় এলাকায় জলপূর্ণ স্ফীতি দেখা যায় ।যায় কারণেচোয়ালের নিচে ফোলা থাকে।
  • পিত্ত নালীতে যাওয়ার পথে ফ্লুক গর্ত করে এ কারণে বদ হজম ও ডায়রিয়া দেখা দিতে পারে।
  • প্রাপ্তবয়স্ক ফ্লুক লিভারের মধ্যে পিত্ত নালীতে জমা হওয়ার কারণে দীর্ঘস্থায়ী রোগের লক্ষণগুলি ধীরে ধীরে বিকাশ লাভ করে।
  • কলিজা কৃমিতে আক্রান্ত হলে তীব্র প্রকৃতির রোগে যকৃত প্রদাহ ও রক্ত ক্ষরণের কারণে উপসর্গ প্রকাশের পূর্বেই পশুর হঠাৎ মৃত্যু ঘটে।

আক্রান্ত কলিজা -


রোগ নির্ণয়:

গরুর মল অণুবীক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করলে ফেসিওলার ডিম দেখা যায় এবং রোগ নির্ণয় করা যায়।

রোগের প্রতিরোধ ব্যবস্থা ও চিকিৎসা:

প্রতিরোধ ব্যবস্থা:

  • গোয়াল ঘর সব সময় শুকনা ও জীবাণুমুক্ত রাখতে হবে।
  • কাদা পানিযুক্ত বা স্যাঁত স্যাঁতে মাঠের ঘাস পশুকে খাওয়ানো যাবে না।
  • বসতবাড়ির বা গোয়াল ঘরের আশেপাশে শামুকের বংশবিস্তার রোধ করতে হবে। কারণ শামুক কৃমির পোষক।
  • ছয় মাস পরপর পশুকে কৃমির ওষুধ খাওয়াতে হবে।

গরুর কলিজা কৃমি থেকে বাঁচার চিকিৎসা:

  • ট্রাইক্লাবেনডাজল বা নাইট্রোক্সিনিল বা অক্সিক্লোজানাইড বা আ্যলবেনডাজল ঔষধ সঠিক মাত্রায় প্রয়োগ করলে এ রোগের ভাল ফল পাওয়া যায়।
  • কোনো প্রাণি কৃমিতে আক্রান্ত হলে পশু চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী চিকিৎসা করা।
  • সহায়ক চিকিৎসা হিসাবে লিভারটনিক প্রয়োগ করা এতে ভালো ফল পাওয়া যায় এবং চিকিৎসার পর আক্রান্ত প্রাণীকে ভিটামিন বি-কমপ্লেক্স ঔষুধ খাওয়াতে হবে।

অর্থনৈতিক ক্ষতি:

কলিজা কৃমি বা লিভার ফ্লুক সংক্রমণ খামারে ব্যাপক ক্ষতি হয়।উৎপাদনশীলতা ব্যাপক আকারে হ্রাস পায় (দূধএবং মাংস)।

অন্য রোগের মতোই কৃমি একটি সাধারণ রোগ।কৃমির আক্রমণে গবাদিপশু পুষ্টিহীনতায় ভোগে। আবার অনেক সময় গাফলতির কারণে চিকিৎসা করা না হলে প্রাণি মারাও যেতে পারে। তাই আমার পরামর্শ এ রোগের উপসর্গ দেখা দিলে কোনো রকম অবহেলা না করে তাড়াতাড়ি অভিজ্ঞ পশু ডাক্তারের পরামর্শ গ্রহণ করুন।

আরও পড়ুন —

Post a Comment

0 Comments
* Please Don't Spam Here. All the Comments are Reviewed by Admin.